সিজোফ্রেনিয়া কী ?

সিজোফ্রেনিয়া এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি মানসিক রোগ, যেখানে একজন মানুষের চিন্তা এবং প্রত্যক্ষণগুলো মারাত্মকভাবে গোলমেলে ধরনের হয়ে থাকে। রোগীর মধ্যে বিভিন্ন অস্বাভাবিক আচরণ, যেমন, কাল্পনিক দৃশ্য দেখা বা আওয়াজ শুনতে পাওয়া বা মনে অদ্ভুত ধারণা বা বিশ্বাস জন্মাতে দেখা যায়। যার বেলায় এগুলো হচ্ছে, তিনি সবকিছু সত্যি মনে করলেও তার আশপাশের মানুষ তা বুঝতে পারে না। এই রোগের কারণে অনেক সময় রোগী মনে করেন যে, অন্যরা তার ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। ফলে তিনি এমন কিছু আচরণ করেন, যা অন্যদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়। সমস্যা হলো, এগুলো যে অস্বাভাবিক, ব্যক্তি তা নিজে বুঝতে পারেন না। বাস্তব ও কল্পনার জগৎ এবং স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক আচরণের মধ্যকার  তাদের কাছে ভীষণ ঝাপসা হয়ে যায়। ফলে তাদের চিকিৎসা করাতে গিয়েও বাধার সম্মুখীন হতে হয়।

এই রোগ খুব দ্রুত প্রকাশিত হতে পারে, যেখানে সপ্তাহ ধরে লক্ষণগুলো বিকশিত হয়। আবার শুরুটা খুব মন্থরও হতে পারে, যেখানে মাস অথবা বছর ধরে লক্ষণগুলো দানা বাঁধে। সিজোফ্রেনিয়া একটি দীর্ঘস্থায়ী মানসিক রোগ, যার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। তবে সঠিক চিকিৎসা পেলে স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্ভব। চিকিৎসার উদ্দেশ্য উপসর্গ কমানো নয় বরং ব্যক্তিকে এই রোগ নিয়ে বাঁচতে শেখানো।

সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ


ব্যক্তি সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণগুলো ভিন্নভাবে ও মাত্রায় অনুভব করেন। একই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে, সাইকোসিস কোনো স্থায়ী পরিস্থিতি নয়। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ব্যক্তি একই সাথে স্বল্প ও মধ্যম মাত্রার লক্ষণ অনুভব করতে পারেন, আবার কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে।

ডিলিউশান বা ভ্রান্তবিশ্বাস


ডিলিউশান হলো এক ধরনের ভ্রান্তবিশ্বাস। নিপীড়ন, অপরাধবোধ বা অন্য কারো নিয়ন্ত্রণে থাকার মতো ভ্রান্ত বিশ্বাস বিভ্রমের লক্ষণের মধ্যে পড়ে; যেমন, কেউ একজন হয়ত এ বিশ্বাসে উপনীত হলেন যে তাকে নিপীড়ন করা হচ্ছে বা দোষ দেওয়া হচ্ছে বা তিনি কোনো বিশেষ মিশনে আছেন বা তিনি কোনো মহান ব্যক্তি বা বাইরে থেকে তাকে কেউ নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেকের কাছে ডিলিউশান বা ভ্রান্তবিশ্বাস খুবই অস্বাভাবিক একটি বিষয় হলেও, যিনি অনুভব করছেন তার কাছে এটি খুবই বাস্তব।

হ্যালুসিনেশান বা অলীক প্রত্যক্ষণ


এগুলো হলো অলীক কিছুর প্রত্যক্ষণ করা; যেমন, কারো কথা শুনতে পারা, কাউকে দেখতে পারা, কোনো কিছু অনুভব করা, কোনো কিছুর স্বাদ নিতে পারা বা গন্ধ অনুভব করা। অলীক প্রত্যক্ষণগুলো খুব ভীতিকরও হতে পারে। বিশেষ করে যখন শুনতে পাওয়া শব্দগুলো নেতিবাচক কোনো মন্তব্য করে বা নির্দেশনা দেয় বা অপ্রীতিকর কোনো ধারণার সূত্রপাত করে।

ভ্রান্তবিশ্বাস বা প্রত্যক্ষণের ভেতর দিয়ে যাওয়া কোনো মানুষের কাছে এগুলো খুব বাস্তব মনে হয়। সে কারণে তারা এগুলোর বিকল্প কোনো ব্যাখ্যা বিবেচনা করতে চান না।

চিন্তার ক্ষেত্রে অসুবিধা


মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি, পরিকল্পনা করার সামর্থ্য, চিন্তা করার ক্ষমতা ও কোনো কিছুতে মনোনিবেশ করতে ব্যক্তির সমস্যা হতে পারে। এর ফলে দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছু বোঝা, যোগাযোগ করা ও নিত্যনৈমিত্তিক কাজ করা তার পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

ব্যক্তির চিন্তাভাবনা অগোছালো হতে পারে, কোনো যৌক্তিক চিন্তাভাবনা না করে তিনি অনিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কেউ একজন হয়ত খুব দ্রুত চিন্তা করতে পারেন, এক চিন্তা থেকে আরেক চিন্তায় দ্রুত চলে যেতে পারেন। আবার তার চিন্তা করার ক্ষমতা খুব শ্লথও হয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে ব্যক্তি কথাবার্তা চালিয়ে যাওয়ার বিষয় খুঁজে পান না, হঠাৎ কথার মাঝখানে থেমে যান বা থামিয়ে দেন, বারবার বিষয়বস্তু বদলাতে থাকেন অথবা কথাবার্তার যৌক্তিক ভিত্তিটাই হারিয়ে ফেলেন। 

উৎসাহ বা অনুপ্রেরণার অবনতি


 ব্যক্তি উৎসাহ বা অনুপ্রেরণার অভাব বোধ করেন এবং নিজের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রেও এ অনুৎসাহ পরিলক্ষিত হতে পারে। আলস্যের সাথে এ উৎসাহের অভাবকে এক করে দেখা যাবে না।

অপ্রযোজ্য বা স্থুল আবেগ


ব্যক্তি আবেগের অভাব বা অপ্রযোজ্য আবেগ প্রদর্শন করতে পারেন। তিনি হয় চারপাশের ব্যক্তি বা বিষয়বস্তুর প্রতি অপ্রতিক্রিয়াশীল হবেন, নয়ত সেগুলোর প্রতি অপ্রযোজ্য আবেগ প্রদর্শন করবেন।

সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতা


সামাজিকভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাবা সাইকোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক। চিকিৎসাসেবা পেতে যত দেরি হবে, ব্যক্তি ততই সামাজিকভাবে নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন।