উদ্বেগ কী?

উদ্বেগব্যাধি সাধারণ দুশ্চিন্তা থেকে ভিন্ন। এটি সাধারণ মানসিক চাপ, ভয় বা দুশ্চিন্তা থেকে অনেক বেশি তীব্র এবং অনেক সময় ধরে চলতে থাকে। এটি স্বাভাবিক জীবনযাপন বা দৈনন্দিন কাজ, যেমন, পড়াশোনা, ঘরের কাজ, চাকুরি এবং সম্পর্কে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। উদ্বেগের তীব্রতার মাত্রা বিভিন্ন হতে পারে; যেমন, মৃদু অস্বস্তিবোধ থেকে শুরু করে মারাত্মক আতঙ্কিত হয়ে পড়া পর্যন্ত। উদ্বেগের স্থায়িত্বকালেরও ভিন্নতা রয়েছে।  এর স্থায়িত্বকাল অল্প কিছু সময় থেকে শুরু করে বছরের পর বছর ধরেও চলতে পারে।  

উদ্বেগের সাধারণ লক্ষণ

শারীরিক প্রভাব

  • বুক ধড়ফড় করা, বুকে ব্যথা, দ্রুত  হৃদস্পন্দন;
  • সংজ্ঞা হারানো, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া;
  • মাথাব্যথা, মাথা ঝিম ঝিম করা, ঘেমে ওঠা, জড়তা অনুভব করা;
  • মুখ শুকনা থাকা, বমি বমি ভাব বা বমি করা, ডায়রিয়া;
  • পেশিতে ব্যথা (বিশেষ করে গলায়, ঘাড়ে ও মেরুদণ্ডে), ক্লান্তি অনুভব করা।

মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

  • ভিত্তিহীন বা অবাস্তব ভীতি ও চিন্তা (বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে);
  • মন ফাঁকা ফাঁকা লাগা;
  • কোনো কিছু মনে করা বা মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়া;
  • সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়া;
  • বিরক্ত, অধৈর্য ও রাগান্বিত হয়ে পড়া;
  • হতবুদ্ধি হয়ে পড়া;
  • ক্লান্ত বা নার্ভাস হয়ে পড়া;
  • ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা;
  • বারবার অনাকাক্সিক্ষত বা নেতিবাচক চিন্তায় ঘুরপাক খাওয়া।

আচরণগত প্রভাব

  • পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা;
  • বারবার একই আচরণ করা; যেমন, অতিরিক্ত চেক করা, কোনো বিষয়ে ক্রমাগত জিজ্ঞেস করা, আশ্বাস খুঁজে নেওয়া;
  • সামাজিক পরিস্থিতিতে মনমরা হয়ে থাকা;
  • অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে ছটফট করা।

উদ্বেগব্যাধির ঝুঁকি (রিস্ক ফ্যাক্টর)

  • জিনগত, যদি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্বিগ্নতার ইতিহাস থাকে;
  • স্পর্শকাতর ও আবেগী মানুষ চারপাশের জগৎকে হুমকি হিসেবে দেখেন;
  • শৈশবের লাজুক বৈশিষ্ট্য ও কৈশোরে উদ্বেগব্যাধির ইতিহাস থাকা;
  • জীবনে চলমান নানা ধরনের চাপ;
  • শৈশবে প্রতিকূল অভিজ্ঞতা, বিশেষ করে প্রতিকূল পরিবেশ বা যত্নের অভাব;
  • দারিদ্র্য, দুর্বল শিক্ষা এবং সামাজিক অসুবিধা;
  • সাম্প্রতিক সময়ে কোনো প্রতিকূল ঘটনার অভিজ্ঞতা, যেমন, পরিবারের কোনো স্বজনের মৃত্যু, বিবাহ বিচ্ছেদ, দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া  ইত্যাদি;
  • মানসিক স্বাস্থ্যজনিত অন্য কোনো সমস্যা।

উদ্বিগ্নতার লক্ষণ যেসব কারণে দেখা দিতে পারে

  • শারীরিক কারণে (যেমন ভিটামিন বি ১২-এর অনুপস্থিতি, ফুসফুসে ও হৃদপিণ্ডে সমস্যা);
  • কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে;
  • অ্যালকোহল বা মাদকের ব্যবহার ও অপব্যবহারের কারণে;
  • অ্যালকোহল বা মাদক প্রত্যাহারের প্রভাব হিসেবে।

উদ্বেগব্যাধির প্রকারভেদ

অনেক ধরনের উদ্বেগব্যাধি আছে। মূলত ব্যাধিগুলো হলো সাধারণ উদ্বেগব্যাধি, প্যানিক ডিজঅর্ডার, ফোবিক ডিজঅর্ডার, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার এবং অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিজঅর্ডার।

উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার মিশ্রণ

 

উদ্বেগ সমস্যায় আক্রান্ত অনেক ব্যক্তি কোনো নির্দিষ্ট ধরনের উদ্বেগব্যাধিতে সীমাবদ্ধ নন। প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যেই কম-বেশি উদ্বেগব্যাধির লক্ষণ আছে। দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চমাত্রায় উদ্বেগ থাকলে তা বিষণ্ণতা সৃষ্টি করে। আবার দীর্ঘ সময় ধরে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যেও উদ্বেগের লক্ষণ দেখা যায়। যে কারণে কিছু ব্যক্তির মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার মিশ্রণ দেখা যায়।