করোনভাইরাস (কোভিড -১৯) এবং এটি আপনার জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে আপনার দুশ্চিন্তা হতে পারে, আপনি উদ্বিগ্ন বোধ করতে পারেন। ইতিমধ্যেই আপনার দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এর মধ্যে বাড়িতে সময় ব্যয় করা আবার বাইরে গেলে অন্যের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা এবং ভাইরাস থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার চিন্তা অন্তর্ভুক্ত। এই চিন্তাগুলো আপনার মনের উপরে কঠিন চাপ ফেলতে পারে। এই অবস্থায় টিকে থাকার জন্য আমরা সবাই লড়াই করছি। তবে এমন অনেকগুলি জিনিস রয়েছে যা আপনি এই অবস্থাতেও নিজের মঙ্গলের জন্য চেষ্টা করতে পারেন। নীচে কিছু ধারণা দেওয়া হলঃ
এমন কিছু মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার অভিজ্ঞতা আছে যা করোনা ভাইরাস এর কারনে স্বাস্থ্যবিধি যেমন বার বার হাত ধোয়া বা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার নির্দেশনাবলী মেনে চলার ক্ষেত্রে জটিল অনুভূতি বা আচরণের কারণ হতে পারে। আপনি যদি এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে থাকেন তবে এ সম্পর্কিত পরামর্শ মেনে চলতে আপনার অসুবিধা হতে পারে। যদি এই কারনে আপনি মানসিক চাপ বা উদ্বেগ বোধ করেন তবে নীচে উল্লেখিত কিছু পরামর্শ আপনি চেষ্টা করতে পারেন:
আপনি যে এই মানসিক অবস্থার সাথে লড়াই করে যাচ্ছেন তা আপনার কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করুন। উদাহরণস্বরূপ, তারা আপনাকে হাত ধোওয়ার জন্য স্মরণ করিয়ে দিক তা আপনি না চাইতে পারেন। সেটা আপনি তাদেরকে বুঝিয়ে বলতে পারেন।
শ্বাস প্রশ্বাসের অনুশীলনগুলি আপনাকে সহায়তা করতে পারে। আপনি এই ওয়েবসাইটে শ্বাস প্রশ্বাসের একটি সহজ অনুশীলনের ভিডিও দেখতে পারেন।
শিথিলকরণ বা রিলাক্সেশন সম্পর্কিত আমাদের পৃষ্ঠাগুলিতে এমন কিছু অনুশীলন এবং অন্যান্য টিপস রয়েছে। এগুলো আপনি চেষ্টা করতে পারেন।
সীমানা নির্ধারণ করুন, যেমন প্রস্তাবিত ২০ সেকেন্ডের জন্য আপনার হাত ধোয়া। হাত ধুয়ে নেওয়ার পরে অন্য কিছুতে মনোনিবেশ করার পরিকল্পনা করুন। এটি আপনাকে অতিরিক্ত সময় ধরে হাত ধোয়া থেকে আপনার মনযোগ সরিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে।
অবসেসিভ বা বাধ্যতামূলক ব্যাধি (ওসিডি) সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানা থাকলে এটি মোকাবেলা করতে আপনাকে সহায়তা করতে পারে
আপনার সাধারণ রুটিন যথাসম্ভব অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। স্বাভাবিক সময়ের মতই একই সময়ে ঘুম থেকে উঠুন, আপনার প্রতিদিনের নিয়মিত রুটিনগুলি অনুসরণ করুন এবং আপনার স্বাভাবিক সময়ে বিছানায় ঘুমাতে যান।
আপনি যদি আপনার স্বাভাবিক সময়ের রুটিনে সন্তুষ্ট না হন তবে এই সময়ে সেটি নিয়ে ভিন্নভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি রাত না জেগে আগে ঘুমাতে যেতে পারেন, রান্না করতে আরও বেশি সময় ব্যয় করতে পারেন বা এমন অন্যান্য কাজ করতে পারেন যা আপনার সাধারণত আগে করা হত না।
আপনি কীভাবে ঘরে বসে মান সম্মত সময় কাটাবেন তা ভেবে দেখুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি স্বাস্থ্যসম্মত নতুন অভ্যাস তৈরির জন্য চিন্তা করতে পারেন, সেগুলি কোনটি কখন করবেন বা কীভাবে অভ্যাস বজায় রাখবেন তার পরিকল্পনা করুন। যেমন নিয়মিত শরীর চর্চা করা, নিজের জন্য একান্ত সময় দেওয়া ইত্যাদি।
গৃহস্থালি কাজের জন্য পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে একটি পরিবারিক রুটিন তৈরি করুন। এতে কে কোন কাজটি কখন করবে তা লেখা থাকবে। রুটিনটি যথাসম্ভব পালন করার চেষ্টা করুন।
কিছু কাজ একাধিক সদস্য মিলে করতে পারেন যেমন রান্না করা, কাপড় ধোয়া ইত্যাদি। এতে করে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে এঁকে অপরের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে ভুমিকা রাখতে পারে।
গৃহস্থালি কাজের ক্ষেত্রে জেন্ডার স্টেরিও ভাঙ্গার চেষ্টা করুন। যেমন পরিবারের পুরুষ সদস্যগন স্বাভাবিক সময়ে যারা সাধারনত রান্না করেন না তারা এই সময়ে রান্না শিখে নিতে পারেন, ঘর পরিস্কার করা বা ছোটদের দেখাশোনা করা ইত্যাদি।
পরিবারের শিশু সদস্যদেরকে ঘরের নানা কাজে সহযোগিতা করতে উৎসাহিত করুন। এতে করে তারা আরও বেশী দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে।
২৪ ঘণ্টা একসাথে থাকার জন্য অনেক সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। একে অপরের প্রতি সম্মান করার এবং একে অপরকে ব্যক্তিগত স্থান দেওয়ার চেষ্টা করুন।
পরিবারের সকলে একসাথে বসে খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। এই সময়ে হালকা বিষয় নিয়ে কথা বলুন। যেমন আজকের দিনটা কীভাবে অতিবাহিত হোল। আগামিকাল কি করা যেতে পারে ইত্যাদি
সপ্তাহান্তের দিনটা পরিবারের সবাই মিলে উদযাপনের পরিকল্পনা করুন। এই পরিকল্পনায় সব সদস্যকে যুক্ত করুন। সবাই মিলে লুডু, ক্যারাম বোর্ড, দাবা, ধাঁধা ইত্যাদি খেলা খেলুন ও নতুন নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করুন।
ডিজিটাল যোগাযোগের মধ্যে নতুন কিছু সংযোজন করতে আপনি নানা কিছু চিন্তা করতে পারেন। যেমন কোন সিনেমা, বই বা কোন গান নিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা করতে পারেন। ধাধা তৈরি করে সেটা নিয়ে খেলতে পারেন।
আপনি যদি করোনাভাইরাস সম্পর্কে উদ্বিগ্ন বোধ করে থাকেন তবে আপনার এই আশঙ্কা নিয়ে আপনার আস্থাভাজন কোন ব্যক্তির সাথে কথা বলা সহায়ক হতে পারে, বিশেষত তারাও যদি একইরকম অবস্থার মধ্যে থেকে থাকে।
যদি আপনি আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন তবে তাদের সাথে সংযুক্ত থাকতে আপনি যা যা করতে পারেন সেগুলি সম্পর্কে ভাবুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার পছন্দের মানুষদের ফটো দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। এগুলো তাদেরকে স্মরণ করি দিতে দারুন কাজ করতে পারে।
যদি আপনার ঘরটি খুব শান্ত মনে হয় তবে রেডিও বা পডকাস্ট শুনতে পারেন।
আপনার প্রতিদিনের রুটিনে শারীরিক ব্যায়াম এর জন্য সময় রাখুন। প্রতি দিন অন্তত ৩০ মিনিট সময় ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। সম্ভব হলে বাড়ির অন্য সদস্যদের কে সাথে নিয়ে ব্যায়াম করুন। বাড়িতে অনুশীলন করা সহজ হতে পারে এমন কিছু শারীরিক কার্যকলাপ হোল:
ঘর ঝাড়ু দেওয়া, মোছা।
বাথরুম/ টয়লেট পরিষ্কার করা
ফ্যান, সিলিং, জানালা, দরজা, খাটের নীচে যেসব জায়গা সাধারনত হাত দেওয়া হয় না সেগুলো পরিস্কার করা।
গানের সাথে সাথে নাচ
সিঁড়ি দিয়ে উপরে-নিচে উঠানামা করা
উঠবস করা
দড়ি লাফানো
অনলাইন ব্যায়াম দেখে তা অনুসরণ করা
আপনি যদি খেয়াল করেন যে আপনি এক ঘন্টা ধরে একজায়গায় বসে আছেন, তাহলে উঠে দাঁড়ান বা আপনার অবস্থান পরিবর্তন করুন।
আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রকৃতি আপনার মানসিক সুস্থতার জন্য বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে। এটি আপনার মেজাজ ভাল রাখতে সাহায্য করতে পারে, চাপ বা রাগের অনুভূতি হ্রাস করতে পারে এবং আপনি আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারেন।
ঘরে থাকাকালীন সময়েও প্রকৃতির ইতিবাচক প্রভাব পাওয়া সম্ভব। আপনি নিম্নলিখিত চেষ্টাগুলো করতে পারেন:
জানালা দিয়ে আসা টাটকা বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নিন। আপনার ত্বকে, চুলে বাতাস লাগতে দিন ও তা অনুভব করুন।
বসার জন্য আরামদায়ক জায়গার ব্যবস্থা করুন, উদাহরণস্বরূপ জানালার পাশে বসার জায়গা যেখান থেকে আপনি গাছ, পাখি বা আকাশ দেখতে পারেন বা পাখির ডাক শুনতে পারেন।
আপনার পছন্দের গান শুনুন, পুরনো দিনের গান শুনতে অনেক সময় ভাল লাগে। সেই সাথে পুরনো কোন আনন্দময় মুহূর্তের কথা ভাবুন।
ছবি আকুন, কাগজ বা ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে কিছু বানান। রঙ করুন। রঙ নিয়ে সময় কাটালে তা মন কে ভাল রাখতে সাহায্য করে।
আপনার প্রিয় জায়গাগুলির ফটো দেখুন। এগুলি আপনার মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে ব্যাকগ্রাউন্ড হিসাবে ব্যবহার করুন বা এগুলি প্রিন্ট করে আপনার দেয়ালে লাগিয়ে দিন।
প্রাকৃতিক শব্দগুলি শুনুন। যেমন পাখির কলকাকলি, সাগরের তরঙ্গ বা বৃষ্টির শব্দ এগুলির রেকর্ডিং শুনুন।
যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক আলো গায়ে লাগান
আপনার যদি বাগান করার মত জায়গা থাকে তবে সেখানে নানান ধরনের গাছ লাগান। এমনকি বড় জায়গা না থাকলেও জানালার পাশে বা বারান্দায় টবে গাছ লাগান। বাগানে সময় ব্যয় করুন, এতে করে আপনার শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
শিথিল/ রিলাক্স থাকার জন্য সৃজনশীল উপায়গুলি সন্ধান করুন
বিভিন্ন উপায়ে আপনি নিজেকে রিল্যাক্স রাখতে চেষ্টা করতে পারেন। যেমন ইয়োগা, মেডিটেশন, মাইন্ডফুলনেস এগুলো শিখে নিতে পারেন ও নিয়মিত অভ্যাস করতে পারেন।
আপনার সৃজনশীল দিকটি ব্যবহার করতে পারেন। যেমন ছবি আঁকা, রঙ করা, কোলাজ, সেলাই, ক্র্যাফটস, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, গান করা বা গান শোনা, লেখা ইত্যাদি।
শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যয়াম করুন। এর কৌশল জানার জন্য এই ওয়েবসাইটে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যয়াম সংক্রান্ত ভিডিও টি দেখুন।
প্রচুর অ্যাপস রয়েছে যা আপনাকে বিদেশী ভাষা বা অন্যান্য নতুন দক্ষতার মতো জিনিস শিখতে সহায়তা করতে পারে।
যদি নিউজ স্টোরিগুলি আপনাকে উদ্বিগ্ন বা বিভ্রান্ত করে তোলে তবে কিছু সময় সেগুলো না দেখার বা সীমাবদ্ধ করার বিষয়ে ভাবুন।
সোশ্যাল মিডিয়া আপনাকে অন্যের সংস্পর্শে থাকতে সহায়তা করতে পারে বটে তবে এক্ষেত্রে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অন্যরা এমন সংবাদ শেয়ার করছে বা তাদের উদ্বেগ নিয়ে পোস্ট দিচ্ছে যা আবার আপনাকে উদ্বেগে ঠেলে দিতে পারে।
আপনি বর্তমানে কীভাবে সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করছেন সেটি রিভিউ করুন এবং প্রয়োজনে বিরতি নেওয়ার বা সীমাবদ্ধ করার বিষয়ে বিবেচনা করুন।
আপনি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা পৃষ্ঠাগুলি দেখার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, টাইমলাইন বা নিউজফিডের মাধ্যমে স্ক্রোল না করে।
এই সঙ্কটকালীন সময়ে আপনার দুশ্চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে আপনি যদি মনে করেন যে আপনি কোন ভাবেই এই দুশ্চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না বা আপনার ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে বা আপনার কাজে মনঃসংযোগ দিতে সমস্যা হচ্ছে তবে এই দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনা ও আপনার ভাল থাকার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এই ওয়েবসাইট এ উল্লেখিত সাইকোলজি টুলস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত বৈশ্বিক অনিশ্চয়তায় দুশ্চিন্তা ও উদবেগের সাথে জীবনযাপন গাইডটি এক্ষেত্রে আপনার সহায়ক হতে পারে।
জরুরী সেবার জন্য আপনি আমাদের হেল্প লাইনে সাহায্য চাইতে পারেন।